অধ্যক্ষ, তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’য়ালার জন্য যিনি আমাদেরকে ঐশী জ্ঞানের মারকাজে কিছু খেদমত করার সুযোগ দিয়েছেন। দরূদ ও সালাম পেশ করছি মানবতার মহান শিক্ষক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি। সাথে সাথে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি যারা মিল্লাত কাননের শুভসূচনা করে আজ পরপারের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন।
‘তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাষ্ট’ কর্তৃক পরিচালিত তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা একটি আবাসিক ও অনাবাসিক আদর্শ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের দ্বিমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষার বাস্তব সমন্বয় সাধন করে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। আদর্শ জাতিগঠনের জন্য প্রয়োজন একজন ‘আদর্শ মা’। তাই এ দেশের মহিলা সমাজকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজে মহিলা আলিম, ফকীহ, মুহাদ্দিস তথা ইসলামী বিষয়ে মহিলা বিশেষজ্ঞ তৈরী করাই এ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা এগিয়ে চলছে দুর্নিবার।
Vision ২০২১ অর্জনের উদ্দেশ্যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে, সরকারের গৃহীত কর্মসূচীর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। বিশেষ করে মিল্লাত পরিবারের রাহবার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবেদীনসহ যাদের প্রচেষ্টায় তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছে তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাষ্ট ও গভর্নিং বডির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, শিক্ষকমন্ডলী, শিক্ষার্থীবৃন্দ, অভিভাবকমন্ডলী, এলাকাবাসী সকলকে জানাই আন্তরিক মুবারকবাদ। আল্লাহ আমাদের সকল প্রচেষ্টাকে সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করুন। আমিন
অবস্থান
রাজধানী ঢাকার ডেমরা থানাধীন মাতুয়াইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নৈসর্গিক মনোরম পরিবেশে মাদরাসাটির অবস্থান। উল্লেখ্য, মাদরাসাটি প্রথমে রাজধানীর উপকণ্ঠে গোলাপবাগে ক্লাস শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে বর্তমান অবস্থানে নিজস্ব ক্যাম্পাসে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট
২০০০ সালের কোনো এক শুভক্ষণে ‘তা‘মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট’ তা‘মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ‘মহিলা শাখা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করার স্বপ্ন নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে গোলাপবাগে ক্ষুদ্র পরিসরে এর কার্যক্রম শুরু করে। সেই প্রচেষ্টার-ই ফসল ‘তা‘মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা’। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জনাব মোঃ আলাউদ্দিন নামে আল্লাহর এক বান্দাহ তাঁর তিন তলা বাড়ি মাদরাসার জন্য দান করে দেন। শুরু হয় মহিলা মাদরাসার একাডেমিক কার্যক্রম। বলাবাহুল্য, তা‘মীরুল মিল্লাতের উন্নতি ও অগ্রযাত্রার রূপকার হলেন অধ্যক্ষ মুহাম্মদ যাইনুল আবেদীন।
স্তরভিত্তিক সরকারী অনুমোদন
* দাখিল (মাধ্যমিক) : ০১ জানুয়ারী ২০০৪
* আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) : ০১ জুলাই ২০০৪
* ফাযিল (স্নাতক) পাস : ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০১২
* কামিল (স্নাতকোত্তর) হাদীস : ১৩ এপ্রিল ২০১৭
লক্ষ্য-উদ্দেশ্য
* ইসলামী নীতি-নৈতিকতার আলোকে শিশু-কিশোর ও তরুণীদের দৈহিক ও মানসিক শিক্ষাদান এবং তাদের সুপ্তপ্রতিভাকে মানবিক ও ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে বিকশিত করা।
* প্রতিটি ছাত্রীকে মুসলিম জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে ইসলামী জীবনাদর্শের সঠিক জ্ঞানদানের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
* ইসলামকে একটি কালজয়ী আদর্শ হিসেবে তুলে ধরার যোগ্যতা সৃষ্টি করা।
* আধুনিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা।
পাঠ্যক্রম
১ম শ্রেণি থেকে আলিম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড এবং ফাযিল স্নাতক ও কামিল স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুসরণ করা হয়। বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শিখানোর জন্য নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।
সহ-পাঠ্যক্রম
* আরবি ও ইংরেজি ভাষায় বিতর্ক অনুষ্ঠান, অনুশীলনী বক্তৃতা, ক্বিরাত, হামদ-নাত, সাপ্তাহিক আলোচনাসভা ইত্যাদি।
* শরীরচর্চা, শরীয়তসম্মত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রীড়ানুশীলন।
* সাহিত্য সাময়িকী, বার্ষিকী প্রকাশ এবং বিজ্ঞানমেলার আয়োজন, আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দেয়ালিকা প্রকাশ।
* সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ।
* বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
* বিভিন্ন দিবস এবং সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন।
শ্রেণিবিন্যাস ও শিক্ষার্থী সংখ্যা
* ১ম শ্রেণি থেকে কামিল-মাস্টার্স শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়।
* কামিল-মাস্টার্স (২ বছর মেয়াদী) শ্রেণিতে হাদীস বিভাগ চালু আছে।
* ফাযিল-স্নাতক (৩ বছর মেয়াদী) বিভাগ। তৃতীয় বর্ষে ইসলামিক স্টাডিজ ও দাওয়াহ বিষয় পড়ানো হয়।
* দাখিল ও আলিম শ্রেণিতে সাধারণ ও বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে।
* প্রথম হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২টি সেকশন চালু।
* শিশু থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের অধ্যয়নের ব্যবস্থা।
* বর্তমানে ছাত্রীসংখ্যা প্রায় দুই হাজার পাঁচশত।
* শিশু থেকে আলিম ক্লাস শুরু সকাল ৮টায়। ফাযিল এবং কামিল শ্রেণির ক্লাস শুরু সকাল ১১টায়।
পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি
* শিশু শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও মাসিক পরীক্ষা।
* শিশু হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত পরীক্ষা গ্রহণ।
* আলিম শ্রেণিতে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর জন্য মডেল টেস্টসহ বিশেষ তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা।
* ফাযিল ও কামিল শ্রেণিতে বিশেষ ও নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।
* তৃতীয় শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সাময়িক পরীক্ষা থেকে ২০% নম্বর নিয়ে বার্ষিক
পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সাথে যোগ করে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করা হয়।
* পঞ্চম শ্রেণি থেকে কামিল পর্যন্ত সকল পরীক্ষা গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয়।
ইউনিফর্ম
* শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি : নেভী ব্লু ফ্রক, সাদা সেলোয়ার, সাদা স্কার্ফ, সাদা কেডস্ ও সাদা মোজা এবং নেভী ব্লু সোয়েটার (শীতকালীন)।
* পঞ্চম শ্রেণি থেকে আলিম শ্রেণি : নেভী ব্লু ফুলহাতা কামিজ, সাদা সেলোয়ার, সাদা স্কার্ফ, সাদা কেডস্ ও সাদা মোজা এবং কালো বোরকা এবং নেভী ব্লু সোয়েটার (শীতকালীন)
* ফাযিল ১ম বর্ষ : কালো বোরকা, কালো ওড়না ও হালকা আকাশী কালার স্কার্ফ।
* ফাযিল ২য় বর্ষ : কালো বোরকা, কালো ওড়না ও বাদামী কালার স্কার্ফ।
* ফাযিল ৩য় বর্ষ : কালো বোরকা, কালো ওড়না ও সুরমা কালার স্কার্ফ।
* কামিল ১ম পর্ব : কালো বোরকা, কালো ওড়না ও হালকা গোলাপী স্কার্ফ।
* কামিল ২য় পর্র্ব : কালো বোরকা, কালো ওড়না ও গাঢ় সবুজ স্কার্ফ।
* ছাত্রদের জন্য : শিশু থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি : সাদা পাঞ্জাবী, সাদা পায়জামা, সাদা শক্ত গোলটুপি, সাদা কেডস্ ও সাদা মোজা।
আবাসিক ব্যবস্থাপনা
একজন ছাত্রীকে প্রকৃত যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে প্রয়োজন নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান। এজন্য আমাদের রয়েছে এক মনোরম আবাসিক ব্যবস্থাপনা।
আবাসিকের বৈশিষ্ট্যসমূহ
* অধ্যয়ন ও আমল-আখলাকের প্রতি বিশেষ নজরদারী।
* নিয়মিত শ্রেণিভিত্তিক কোচিং।
* হাউজ টিউটরদের তত্ত্বাবধানে সন্ধ্যার পর বিশেষ ক্লাস।
* তিনবেলা স্বাস্থ্যসম্মত রুটিন মাফিক খাবার ও একবেলা টিফিন।
* পঞ্চম শ্রেণি থেকে কামিল পর্যন্ত আবাসিকে ছাত্রী ভর্তির সুযোগ।
* ২৪ ঘণ্টার সুনির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ।
* পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামায়াতে পড়ার ব্যবস্থা
আবাসিকের নিয়মাবলি
* খাট, চেয়ার ও টেবিল প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
* ভর্তির সময় থেকে কমপক্ষে তিন মাস থাকতে হবে, অন্যথায় জামানতের টাকা ফেরত পাবে না।
* প্রত্যেক চলতি মাসের ০৫ তারিখের মধ্যে যাবতীয় প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে।
* ছাত্রীনিবাসের নিয়মানুযায়ী দৈনন্দিন খাবার, লেখাপড়া, নামায ইত্যাদি সম্পন্ন করতে হবে।
* অনুমতি গ্রহণ ব্যতীত ছাত্রীনিবাসের বাইরে যাওয়া যাবে না এবং অভিভাবক ছাড়া বাড়িতে যাওয়া যাবে না।
* বাড়ি যেতে হলে ছুটি নিয়ে যেতে হবে এবং রেজিস্টার খাতায় নাম লিখে যাবে। ছুটি থেকে এসে আসার তারিখ ও সময় লিখতে হবে।
* হোস্টেলে মোবাইল ফোন রাখা সম্পূর্ণ নিষেধ। ব্লক ইনচার্জের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অভিভাবকদের সাথে কথা বলা যাবে।
* অভিভাবকদের সাথে সাক্ষাতের সময় বিকাল ৪-৬টা এবং শুক্রবার সারাদিন। সন্ধ্যার পর কোনো অভিভাবকের সাক্ষাৎ কিংবা বাইরে যাওয়া যাবে না।
* মাসে সাধারণতঃ দুই দিন ছুটি গ্রহণ করা যাবে।
* মাদরাসার ক্লাস চলাকালীন সময়ে হোস্টেলে অবস্থান করা যাবে না।
* মাদরাসা ও হোস্টেলের কোনো সম্পদ নষ্ট কিংবা অপচয় করা যাবে না।
* অন্য ছাত্রীদের জিনিসপত্র তার অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করা যাবে না।
* কোনো অভিভাবক ও মেহমানদের ছাত্রীনিবাসের অভ্যন্তরে নেয়া যাবে না।
* ছাত্রীনিবাসের বাইরে যেতে চাইলে অবশ্যই হোস্টেলের দায়িত্বরত ম্যাডামের কাছ থেকে স্লিপ নিতে হবে।
* হোস্টেলের মাসিক চার্জ : সাধারণ বিভাগে ৫,০০০/- এবং বিজ্ঞান বিভাগে ৫,৫০০/- টাকা। ভর্তির সময় জামানত বাবদ (ফেরতযোগ্য) ১,০০০/- টাকা প্রদান করতে হবে।
* শুধুমাত্র অভিভাবকের অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই সাক্ষাৎ করতে পারবেন।
জামে মসজিদ
‘আনোয়ারা খাতুন জামে মসজিদ’ নামে মাদরাসার একটি সুদৃশ্য জামে মসজিদ রয়েছে। সাধারণ মুসল্লিরা ৫ম তলা পর্যন্ত নামায আদায় করে, আর ছাত্রীরা তাদের হোস্টেল থেকে ব্রিজ দিয়ে মসজিদের তৃতীয় তলায় গিয়ে জামায়াতে শামিল হয়। নামায আদায় ছাড়াও এ মসজিদে কুরআন শিক্ষা, ধর্মীয় আলোচনাসভা, প্রতি শুক্রবার বাদ মাগরিব পবিত্র কুরআনের তাফসীর, পবিত্র রমযানে মাসব্যাপী রমযানের শিক্ষা ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রন্থাগার
অত্র মাদরাসার অন্যতম বড় আকর্ষণ হলো বহু মূল্যবান ও দু®প্রাপ্য প্রায় চার হাজারেরও অধিক পুস্তক সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। ছাত্রীরা তাদের পছন্দ মতো বই নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারে। এছাড়া ছাত্রী-শিক্ষিকাদের গবেষণার জন্য এ গ্রন্থাগারে নিয়মিত সংরক্ষিত হয় বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকা এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ভাষার গবেষণামূলক জার্নাল।
বিজ্ঞানাগার
মাদরাসার রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত একটি আকর্ষণীয় বিজ্ঞানাগার। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীরা এতে ব্যবহারিক ক্লাস করে এবং গবেষণা করে বিভিন্ন জিনিস আবিষ্কার করে।
কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস
তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেয়ার জন্য অত্র প্রতিষ্ঠানের রয়েছে মানসম্মত একটি কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম
ভর্তি প্রক্রিয়া
* শিশু শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির জন্য ১ নভেম্বর থেকে ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু হয়। অতঃপর ২৫ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে ভর্তি করা হয়।
* আলিম শ্রেণিতে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের দাখিল কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এবং ফাযিল (স্নাতক)ও কামিল (স্নাতকোত্তর) শ্রেণিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশের পর ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
* ভর্তি বিজ্ঞপ্তি জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করা হয়। অনলাইন-ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
* ভর্তি পরীক্ষার বিষয়সমূহ শ্রেণিভিত্তিক বাংলা, ইংরেজি, আরবী, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান।
* শিশু এবং প্রথম শ্রেণিতে শুধু মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।
* দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়।
* নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য অতিরিক্ত বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।
* ভর্তি পরীক্ষার মোট নম্বর ১০০ এবং সময় ১ ঘণ্টা।
* যে শ্রেণিতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক তার পূর্ববর্তী শ্রেণির বর্ণিত বিষয়গুলো অনুশীলন করতে হবে।
ভর্তি সংক্রান্ত ফি হার নিম্নরূপ
আমাদের ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন
০১. মা’হাদুল লুগাহ (ভাষা শিক্ষা) : আরবি ও ইংরেজি ভাষায় কথোপকথনের যোগ্যতা অর্জনের নিমিত্তে সাপ্তাহিক বিশেষ কোর্স চালু আছে। প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই ক্লাস পরিচালিত হয়। নাহু-ছরফ, ইংরেজি ঝঢ়ড়শবহ-এর পাশাপাশি সহীহ কুরআন শিক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে। পঞ্চম থেকে কামিল পর্যন্ত যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা এতে অংশ গ্রহণ করতে পারে। প্রতি ব্যাচে ৩০/৪০ জন পর্যন্ত ছাত্রী নেয়া হয়। প্রতি ব্যাচের জন্য ২৪x৩=৭২টি ক্লাস তথা ৬ মাস নির্ধারিত। নূরানী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলা ক্বারী এবং আরবি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ শিক্ষিকামন্ডলী দ্বারা এই কোর্স পরিচালিত হয়।
০২. সাপ্তাহিক তা’লীম-তারবিয়্যাহ ক্লাস : প্রতি বৃহস্পতিবার ছুটির পর নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক শ্রেণি মাসে একটি তা’লীম-তারবিয়্যাহ ক্লাস পেয়ে থাকে। ক্লাসের বিষয়সমূহের মধ্যে থাকে পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য, সালাত তরক করার ভয়াবহ পরিণাম, সন্ত্রাস ও মাদকের ভয়াবহতা, পর্দা-ই নারীর ভূষণ, মিথ্যা ও তার ভয়াবহ পরিণাম, সালামের গুরুত্ব ও তাৎপর্য, কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফযীলত ইত্যাদি। এক ঘণ্টাব্যাপী এই ক্লাস গ্রহণ করেন মুহতারাম অধ্যক্ষ ও কো-অর্ডিনেটর মহোদয়।
০৩. প্রতিভার সন্ধানে আমাদের আয়োজন : প্রতিভার সন্ধানে প্রতি বৃহস্পতিবার ছুটির পর পাঁচটি বিষয়ে স্ব-স্ব শ্রেণিকক্ষে বাছাই পর্ব চলতে থাকে। বিষয়গুলো হলো কুরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত, আবৃত্তি, বক্তৃতা, বিতর্ক। বাছাই পর্বে প্রতিক্লাস থেকে ১০ জন নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু হয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে নিম্নরূপ গ্রুপ হয় :
শিশু-প্রথম, দ্বিতীয়-চতুথর্, পঞ্চম-সপ্তম, অষ্টম-দশম, আলিম-কামিল।
এবার প্রত্যেক গ্রুপ থেকে ৫ জন করে ফাইনাল পর্বের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকবে। এভাবে সারাবছর সহপাঠ্যক্রম কার্যবলি অব্যাহত থাকে।
০৪. ডে-কেয়ার পদ্ধতি : একাডেমিক ক্লাস ছুটির পর শ্রেণি ও গ্রুপভিত্তিক বিশেষ ক্লাস শুরু হয়ে যায়। প্রতিটি গ্রুপে ২০-৩০ জন ছাত্রী থাকে। সকল ক্লাসের আরবি, গণিত, ইংরেজি এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য রসায়ন, পদার্থ, জীববিজ্ঞান ও গণিত ক্লাস নেয়া হয়। ফলে কোনো ছাত্রীকে বাসায় গিয়ে আর প্রাইভেট পড়তে হয় না।
০৫. অ্যাসেম্বলীতে Spoken Practice : নিয়মিত অ্যাসেম্বলীতে কুরআন তিলাওয়াত ও জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি Spoken Arabic এবং Spoken English চর্চা করানো হয়। সপ্তাহে তিন দিন আরবী ও তিন দিন ইংরেজি কথাবার্তা Practice হয়। সকল ছাত্রীকে এতে অংশগ্রহণ করতে হয়।
০৬. বোর্ড পরীক্ষার্থীদের বিশেষ Care : পঞ্চম, অষ্টম, দশম এবং আলিম বোর্ড পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রতি ৩০ জনে এক জন শিক্ষক Guide Teacher হিসেবে পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেন। সাপ্তাহিক পরীক্ষা গ্রহণ, Home Visit, দুর্বলদেরকে চিহ্নিত করে অভিভাবকদের সাথে Co-oparation, Hand note দেখা ইত্যাদি কার্যক্রম তিনি পরিচালনা করেন। ফাযিল এবং কামিল পরীক্ষার্থীদের জন্য টেস্টের পর কেন্দ্রীয় পরীক্ষার পূর্ব পর্যন্ত বিশেষ গাইডলাইনমূলক ক্লাস নেয়া হয়।
০৭. বিষয়ভিত্তিক Inhouse শিক্ষক প্রশিক্ষণ : চতুর্থ শ্রেণি থেকে অষ্টম এবং নবম শ্রেণি থেকে আলিম শ্রেণিতে নাহু-ছরফ পাঠদানকারী শিক্ষিকাদের নিয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অনুরূপভাবে ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, কুরআন-হাদীস ও ফিকহ ইত্যাদি বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। এতে প্রত্যেকেই তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খোঁজেন। মুহতারাম অধ্যক্ষ এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
০৮. পরিবহন ব্যবস্থা : মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রী আনা-নেয়ার জন্য অত্র প্রতিষ্ঠানের তিন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে :
ক) বড় বাস, খ) মাইক্রোবাস ও গ) রিকসাভ্যান। দূরের-কাছের যেকোনো শিক্ষার্থী নিরাপদ যাতায়াতের জন্য এই পরিবহনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। বিশেষকরে বোর্ড পরীক্ষার্থীদেরকে কেন্দ্রে আনা-নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা থাকে।
০৯. মাহে রমযানের কর্মসূচি : ১ রমযান থেকে ২০ রমযান পর্যন্ত সহীহ কুরআন শিক্ষা ও নাহু-ছরফের বিশেষ ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। যেকোনো বয়সের আগ্রহী শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করতে পারে। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সহীহ কুরআন এবং ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নাহু-ছরফের ক্লাস হয়।
১০. আলিম ফাউন্ডেশন কোর্স : বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ছাত্রীদের জন্য নাহু-ছরফ, Basic English, বিজ্ঞান, সহীহ কুরআন শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে মাসব্যাপী আলিম ফাউন্ডেশন কোর্স পরিচালিত হয়। কোর্সশেষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়।
১১. অনলাইন প্রক্রিয়া : আমাদের Website -এ প্রবেশ করে ভর্তি ফরম পূরণের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে। এছাড়াও বেতনসহ যাবতীয় কালেকশন অনলাইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। আমাদের ওয়েবসাইটে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার রুটিন ও রেজাল্ট প্রভৃতি পাওয়া যায়।
১২. মেসেজ পদ্ধতি : কোনো ছাত্রী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে সাথে সাথে অভিভাবকের নিকট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মেসেজ চলে যায়। এছাড়াও ফরম পূরণ, অভিভাবক সমাবেশ, সবক অনুষ্ঠানসহ যাবতীয় আয়োজনের ক্ষেত্রে গ্রুপ মেসেজ দিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা হয়।
অভিভাবকদের জন্য জ্ঞাতব্য বিষয়
* নিজ নিজ সন্তানের মাদরাসায় উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
* বিনা অনুমতিতে সন্তান মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকলে প্রতিষ্ঠানকে অবগত করানো।
* মাদরাসার ইউনিফর্ম পরিধান করে মাদরাসায় আসার ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া।
* সন্তানের মানোন্নয়নে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের আহ্বানে সাড়া দেয়া।
* মাদরাসার ডায়েরী নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও স্বাক্ষর করা।
* মাদরাসা কর্তৃক ঘোষিত অভিভাবক সমাবেশে উপস্থিত থাকা।
* সন্তানের কল্যাণ কামনায় নিয়মিত আল্লাহর নিকট দু‘আ করা।
* মোবাইল ফোন ব্যবহার করাকে সম্পূর্ণ নিরুৎসাহিত করা।
* নিরাপদ সড়কের নিয়ম মেনে চলাচল করা।